আজ রবিবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দশম জাতীয় সংসদ সব দিক থেকেই কার্যকর, স্পিকার

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

দশম জাতীয় সংসদ সব দিক থেকেই কার্যকর, স্পিকারস্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

সংবাদচর্চা ডেস্ক:

সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দশম সংসদ সব দিক থেকেই কার্যকর বলে দাবি করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার মতে, দেশে ও দেশের বাইরে সব দিক থেকেই উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে বর্তমান সংসদ। তবে সংসদীয় কার্যক্রম অনুশীলনে নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একদিনেই সব বিষয়ে এ প্লাস পাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।

দেশে দীর্ঘদিনের সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি এড়িয়ে এবারের সংসদে বিরোধী দল অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ধারার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, মাঝেমধ্যে তারা ওয়াকআউট করেছে। যদিও সেটা সংসদীয় কার্যক্রমেরই অংশ। তিনি বলেন, অতীতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলকে পাওয়া যায়নি; এবারে তারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের প্রশ্ন করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে চাইলে এ কার্যক্রমগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। অন্যথায় সংসদকে কার্যকর সম্ভব হবে না।

চলতি দশম সংসদের চার বছর পূর্তিতে সংসদের নানা বিষয় দেওয়া  সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এই সংসদের বড় অর্জন সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় দুটি আন্তর্জাতিক ফোরাম ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলন ঢাকায় সফলভাবে শেষ করতে পারা। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ও এই সংসদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

কোরাম ছাড়াই সংসদের বৈঠক চালানোর ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, চার বছরে এমন ঘটনা একদিন ঘটলে সেটা দিয়ে পুরো সময়ের সফলতা-বিফলতা বিচার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে এমপিদের অনাগ্রহ আছে, সেটা তিনি স্বীকার করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ওই দিন একটা উন্নয়ন মেলা চলছিল। বিষয়টি সংসদের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। সংসদের তুলনায় বাইরের কাজকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন এমপিরা- সেটা বলারও সুযোগ নেই। উন্নয়ন মেলাটা জাতীয় পর্যায়ের একটা বিষয় ছিল।

এসব আলোচনা সরকারের জবাবদিহি বা রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, গত বছরের বাজেট আলোচনার দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। ব্যতিক্রমধর্মী ওই আলোচনায় প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারি দলের সদস্যরাও। এমপিদের অনেক মৌলিক পরামর্শ ওই বাজেট পাসের সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা দশম সংসদে ছিল বলেও দাবি করেন তিনি। বিরোধী দলের ধারণাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।

সংসদে বিতর্ক কেন হচ্ছে না বা বিতর্কের বিষয়টি আড়ালে চলে যাচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, আইন প্রণয়ন সংসদের প্রধান কাজ। গত চার বছরে সংসদের বৈঠকে ১৩০টি আইন পাস হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বিলটি উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি উঠছে। মন্ত্রীকে তার জবাব দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ গোড়াতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এবং একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের জায়গায় চলে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সংশোধনী গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু এমন নয় যে পদ্ধতিগত বা আইনগত চর্চা হচ্ছে। বিরোধী দলের কথাও মন্ত্রীকে শুনতে হচ্ছে।

সংসদের বৈঠকে মন্ত্রীরা যথাযথ জবাব দেন না- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, এটাই প্রমাণ করে যে সংসদে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। কারণ, মন্ত্রীর জবাবেরও সমালোচনা হচ্ছে। মন্ত্রী যদি গতানুগতিক কথা বলেন, সেখানে সদস্যের এই প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে- এটাই গণতন্ত্রের অংশ।

স্পিকার বলেন, সবকিছু একদিনে এ প্লাস হয়ে গেছে, এ রকম বলার সুযোগ নেই। বিলের ওপর আরও বেশি আলোচনার সুযোগ এখানে রয়েছে। কোনো বিলকে গলা টিপে এখনই পাস করিয়ে দিতে হবে- এমন কোনো বিষয় নেই। এমপিরা আগ্রহ প্রকাশ করলে অবশ্যই বিতর্ক হতে পারে। তিনি বলেন, সরকারি দলের সদস্যরাও সংশোধনী দিতে পারেন এবং তারা সংশোধনী দিলে অনেক সময় গ্রহণও করা হয়। তার মতে, সংসদীয় কার্যক্রম একটি প্রক্রিয়া। একে উন্নত করার সুযোগ সব সময়ই থাকে। ধাপে ধাপে সেটা অগ্রসর হবে।

১৪৭ বিধি অনুযায়ী সাধারণ প্রস্তাবের ওপর চার বছরে ১৪টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; কিন্তু একটিও মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি- এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, অনেক মুলতবি প্রস্তাব পেলেও কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সংসদের অন্যান্য বিধিতেই সেটা নিষ্পন্নযোগ্য। মুলতবি প্রস্তাব নেওয়ার অর্থ সরকারকে ‘তিরস্কার’ করা। এ কারণেই এটা এড়িয়ে চলা হয়। গুরুতর বিচ্যুতির বিষয় ছাড়া সংসদের বৈঠক মুলতবি করে আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ নেই। সব ব্যাপারে এটা গ্রহণ করলে তার মূল্যটা আবার থাকে না।

মুলতবি প্রস্তাব নাকচ করলেও সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয় না- যদিও আগের সংসদে কেন গ্রহণ করা গেল না, স্পিকারের কাছ থেকে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এ বিষয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এখন থেকে এটা করা হবে। বিষয় উল্লেখ করেই জানানো হবে।

বর্তমান সংসদের বিরোধী দল নিয়ে সমালোচনার জবাবে স্পিকার বলেন, অনুগত বা গৃহপালিত বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। কারা বিরোধী দল হবেন- সেটা তো জনগণের ভোটে নির্ধারিত হবে। কারও পক্ষে তো বিরোধী দল পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই সংসদের এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। বর্তমান সংসদে আরেক ধরনের চ্যালেঞ্জ। যখন যেটা সামনে আসে, সেটাকে মোকাবেলা করেই সংসদ পরিচালনা করতে হয়। তবে বর্তমান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

সংসদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে মন্ত্রীদের অনীহার কারণে মাসে একটি বৈঠকও করা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানান, এ অভিযোগের বিষয়ে কমিটি সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলেছে। কারণও জানতে চেয়েছে। স্পিকার বলেন, এটা আসলে মন্ত্রীদের আগ্রহের বিষয় নয়; সভাপতি যদি মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে দিন নির্ধারণ করেন, তাহলেই সমস্যা মিটে যায়। একটু সমন্বয় করে নিলেই হয়। আর কে উপস্থিত থাকছেন আর কে থাকছেন না- সেটা তো বিষয় নয়, কোরাম হলেই সভাপতি বৈঠক করতে পারেন।

স্পিকার নিজেই পিটিশন কমিটি ও বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতি; কিন্তু ওই কমিটির বৈঠকও হচ্ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীন শারমিন বলেন, পিটিশন কমিটির বৈঠক আগে হতোই না। এবার এ কমিটি দুবার বৈঠকে বসেছে। তিনি বলেন, বিশেষ অধিকারের কিছু নোটিশ পেন্ডিং রয়েছে। একই বিষয়ে দুটি নোটিশ রয়েছে। একটি নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের দেওয়া, আরেকটি রাজশাহীর এমপি এনামুল হকের দেওয়া। এ বৈঠক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতাসহ হেভিওয়েটরা এ কমিটির সদস্য। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সভা ডাকতে হয়। তাই সময় লাগছে।